ঢাকাশনিবার , ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • অন্যান্য
Tanim Cargo
আজকের সর্বশেষ সবখবর

স্বামীর অধিকার আদায়ে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা

আজকের বিনোদন
ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪ ২:০৫ পূর্বাহ্ণ । ৮৬ জন
Link Copied!
দৈনিক আজকের বিনোদন সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আশিকুর রহমান :-

কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার বাসিন্দা খাদিজা ইসলাম পপি (২২)। বিয়ে হয় নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের বাসিন্দা তাজুল ইসলামের কুয়েত প্রবাসী ছেলে কবীর হোসেনের সাথে। সম্প্রতি খাদিজার গর্ভে জন্ম হয় মেয়ে সন্তান। অবশেষে ফুটফুটে এ সন্তানকে নিয়ে ঠাঁই হয়নি কবীর হোসেনের বাড়িতে। মানুষের দ্বারেদ্বারে ঘুরেও যখনও মিল ছিলনা স্বামীর অধিকার, তখনই সিদ্ধান্ত নেন শ্বশুরবাড়িতে এসে একমাত্র সন্তান সহ চলন্ত ট্রেনের নিচে আত্মহত্যা করার। আর সেখান থেকেই স্থানীয় জনগন সন্তানসহ সেই নারীকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় পুরো রায়পুরায় চাঞ্চল্যকর সৃষ্টি হয়েছে। ৮ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) দুপুরে রায়পুরা উপজেলার মেথিকান্দা রেলওয়ে স্টেশনের কাছে এ ঘটনা ঘটে। পরে শুক্রবার(৯ফেব্রুয়ারী) ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন রায়পুরা থানার ওসি তদন্ত মীর মাহবুবুর রহমান।
স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে মেথিকান্দা রেলস্টেশনে রেললাইনের উপর দাঁড়িয়ে ছিলেন বাচ্চাসহ এক নারী। এ লাইন দিয়ে পূর্বদিক থেকে ট্রেন আসছিলো। স্টেশনে থাকা লোকজনের তা নজরে পড়ে। অনেক ডাক-চিৎকারেও তা আমলে নিচ্ছিলেন না সেই নারী। পরে অদূরে থাকা লোকজন দৌড়ে গিয়ে রেললাইন থেকে সরিয়ে আনেন বাচ্চা সহ ওই নারীকে। ওইসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
ভুক্তভোগী ওই নারীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের পরিচয় এবং প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে ২০২১ সালের ১৬ নভেম্বর বিদেশ থেকে ছুটিতে কবীর দেশে আসে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৭ নভেম্বর ইসলামী শরীয়া মোতাবেক ২ লক্ষ টাকা কাবিনের মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের ১৭ দিন পরে কবীর আরেকটি বিয়ে করে। পরে আমি দেড় মাস পর ওই বিয়ের কথা জানতে পারি। আমি তাদের বিয়ের খবর শুনার পর কবীরকে জিজ্ঞেসা করলে সে বলে, সে বিয়ে করতে চায় নি তার পরিবার তাকে জোর করে বিয়ে করানো হয়েছে। ওই মেয়েকে ছেড়ে দিবে বলে আমাকে বিশ্বাস করানোর জন্য যা যা করা দরকার সবকিছু করেছে। এরপর সে আবার যথারীতি বিদেশে চলে যায়। আমাদের বিয়ের প্রায় সাত মাস পর সে আমাকে তার কাছে অর্থাৎ কুয়েতে নিয়ে যায়। সেখানে আমি ক্লিনারের চাকুরি করি। তার মা অসুস্থ হলে আমি তার মায়ের চিকিৎসার জন্য টাকা পাঠাই। তার পরিবারের সবাই তখন বিষয়টা জানে আমাদের বিয়ে হয়েছে এবং বিদেশে একসাথে আমরা সংসার করছি। বিদেশে থাকা অবস্থায় আমি গর্ভবতী হই। আমার গর্ভবতীর বয়স ৭ মাস হলে ও-ই দেশের কোম্পানি আইন অনুযায়ী সেখানে গর্ভবতীদের কাজ নিষিদ্ধ ছিলো। তখন আমাকে দেশে পাঠিয়ে দেয়। দেশে এসে আমি আমার বোনের বাসায় উঠি। সেখানে থেকেই মেয়ে সন্তানের জন্ম দিই। এখন আমার স্বামী আমাকে অস্বীকার করছে। সে আমাকে বিয়ে করে নাই, এ বাচ্চা তার না এগুলা ছাড়াও সে আমার এ অবুঝ সন্তানকে নিয়ে পর্যন্ত নোংরা কথা বার্তা বলছে তাই সন্তানসহ আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। তিনি আরো বলেন, বিদেশে থাকা অবস্থায় আমার জীবনের সমস্ত রোজগার কবীরের হাতে তুলে দিয়েছি। তখন তার বাবা-মা, স্বজনরা আমাদের বিয়ে এবং সংসারের কথা সবই জানতো। আমার যতো টাকা-পয়সা ছিলো সবই তার কাছে। আমি বেতনটা পেলেই পাওনাদারদের দোহায় দিয়ে সে টাকা গুলো নিয়ে যেতো। স্বামীর অপমান হবে ভেবে আমিও টাকা দিয়ে দিতাম। তখন আমার টাকা ছিলো, এখন আমার টাকা নেই বলে তারা আমার স্বামী, সন্তান ও সংসারকে অস্বীকার করছে। এই পৃথিবীতে আমার মা-বাবা নেই। আমি এতিম অসহায়। স্বামীর অধিকার আদায়ে লড়াই করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের দ্বারেদ্বারে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে গেছি। এখন আর বেঁচে থাকার ইচ্ছে নেই। কলংক নিয়ে বেঁচে থাকলে আমার এ নিস্পাপ সন্তানকে কুকুর বিড়ালের মতো মানুষ রূপী নরপিশাচরা ছিড়ে ছিড়ে খাবে তাই তাকে নিয়েই আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম। এবিষয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও থানায় অভিযোগ করেছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান, মেম্বার থেকে শুরু করে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সহ অনেকের কাছেই গিয়েছি। রায়পুরা থানায় লিখিত অভিযোগও করেছি। কারো কাছেই ন্যায় বিচার পায়নি। পাইনি সন্তান নিয়ে স্বামীর গৃহে থাকার অধিকার।
এদিকে কবীরের বাবা তাজুল ইসলাম দাবি করেন, খাদিজা ইসলাম পপি নামে কোনো মেয়ের সাথে তার ছেলে কবীরের বিয়ে হয়েছে এমন কিছুই আমরা জানি না। আমার ছেলের পূর্বে স্ত্রী ও একটা নাতি রয়েছে। আমার ছেলের সাথে কথা বলেছি, সে বলেছে এ মেয়েকে সে চিনে না এবং বিয়েও করে নি। এখন আমি এ মেয়েকে ঘরে তুলতে পারবো না। আমার ছেলে (কবীর) কিছুদিন পর দেশে আসবে তখন তাকে আসতে বলেছি।
এ বিষয়ে রায়পুরা থানার ওসি তদন্ত মীর মাহবুবুর রহমান বলেন, ঘটনাটি শুনে সাথে সাথে ফোর্স পাঠানো হয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে ওই নারী যাকে স্বামী দাবি করছেন সেই ব্যক্তি (কবীর) বিদেশে অবস্থান করছেন। যেহেতু নারী দাবী করছে তার স্বামী ভরনপোষণ দিচ্ছেনা সেজন্য তাকে পারিবারিক আদালতে গিয়ে ভরণপোষণের একটি মামলা করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Tanim Cargo
Tanim Cargo