ঢাকাবৃহস্পতিবার , ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
Tanim Cargo
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সর্বোচ্চ সতর্কে বিজিবি ( সাব) মিয়ানমারের বিজিপিসহ ৩৩০ জনকে হস্তান্তর বিজিবির নিয়ন্ত্রণে সীমান্ত

আজকের বিনোদন
ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪ ৪:৫৬ অপরাহ্ণ । ৫০ জন
Link Copied!
দৈনিক আজকের বিনোদন সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

জাহেদ হোসেন :
কক্সবাজার \ মিয়ানমারে তীব্র সংঘাতের মধ্যে পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার বর্ডার গার্ড (বিজিপি), সেনাবাহিনী, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা ও শুল্ক কর্মকর্তাসহ ৩৩০ নাগরিককে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে মিয়ানমারে। বর্তমানে বাংলাদেশ সীমান্ত পুরোপুরি বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবির) নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। বর্ডারের পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। শান্তি বিরাজ করছে জনমনে।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্র“য়ারি) বেলা ১১টার দিকে উখিয়ার ইনানী নৌ-বাহিনীর জেটিঘাট থেকে বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মিয়ানমার নাগরিকদের বিজিপির কাছে হস্তান্তর করা হয়। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী মিয়ানমার বিজিপি কর্নেল মায়ো থুরা নাউংয়ের কাছে তাদের (বিজিপি) বুঝিয়ে দেন। এরপর দেশটির নাগরিকদের জাহাজে তোলা হয়। সেন্টমার্টিন-টেকনাফ র“টের পর্যটকবাহী দুটি জাহাজে করে তাদের গভীর সমুদ্রে অবস্থান করা মিয়ানমারের জাহাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর আগে সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে স্বসন্মানে ছয়টি চেয়ারকোচে করে তাদের ঘুমধুম ও হ্নীলা সীমান্ত থেকে ইনানী জেটিঘাট স্থানে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের সেনাসহ ৩৩০ জনকে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তরের পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে বিজিবির অধীনে।
বিজিবির সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, গত ২ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের ওপারে আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির সংঘর্ষ শুর“ হয়। বিদ্রোহীদের সঙ্গে তীব্র সংঘাতের মধ্যে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিজিপি ও সেনা সদস্যসহ দেশটির ৩৩০ জন নাগরিক পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। যার মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, চারজন বিজিপি পরিবারের সদস্য, দুইজন সেনা, ১৮ জন ইমিগ্রেশন-কাস্টম সদস্য ও চারজন বেসামরিক নাগরিক ছিলেন। তাদের ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা তাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়। এর প্রেক্ষিতে বিজিবির রামু সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মেহেদী হোসাইন কবীরের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পুলিশের প্রতিনিধির সমন্বয়ে সাত সদস্যের একটি প্রত্যাবাসন কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয় এর মাধ্যমে বৃহস্পতিবার হস্তান্তর প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত ও টেকনাফ থেকে বিজিবির কড়া পাহারায় কক্সবাজারের ইনানী নৌ-বাহিনীর জেটিঘাটে এই ৩৩০ জনকে আনা হয়। যেখানে সকাল ৮টা থেকে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমারবিষয়ক পরিচালক মো. রাকিবুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মো. রাশেদ হোসেন চৌধুরী, বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়ে, বিজিবির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মো. মাহাফুজুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্টরা।
শরীফুল ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে ৯টার কিছুক্ষণ পর কোস্টগার্ডের জাহাজে করে ইনানী জেটিতে আসেন মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বিজিপির কর্নেল মিও থুরা নউংয়ের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। সেখানে পৌঁছার পর উভয় দুই প্রতিনিধিদের মধ্যে লিখিত কাগজে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে শুর“ হয় হস্তান্তরের আনুষ্ঠানিকতা। বেলা ১১টার দিকে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়ের উপস্থিতিতে ৩৩০ সদস্যকে বিজিপির কর্নেল মিও থুরা নউংয়ের হাতে হস্তান্তর করেন। এরপর একে একে ১৬৫ জনকে সেন্টমার্টিন নৌর“টে চলাচলকারি পর্যটকবাহী জাহাজ কর্ণফুলিতে তোলা হয়। দুপুর ১২টার দিকে জাহাজটি তাদের নিয়ে বাংলাদেশের সমুদ্র সীমান্তে অপেক্ষারত মিয়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজে পৌঁছে দেয়। বিকেল ৪টার দিকে দ্বিতীয় দফায় বাকি ১৬৫ জনকে একই জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। এরপর জাহাজটি মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুর“ করে। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জান্তা সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও সে দেশের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। যার প্রভাব বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের এপারে এসে পড়ে। এতে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া ৩৩০ জনকে বিজিবির পক্ষে সর্বোচ্চ সহায়তা ও সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। উভয় দেশের আন্তরিকতায় এবং নানা মহলের সহযোগিতায় তাদের মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হলো। এর জন্য সাংবাদিকসহ সকলকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধৈর্য ধারণ করে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রেখে বিজিবিকে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করার নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে সীমান্তে সর্বোচ্চ সর্তক রয়েছে বিজিবি। রোহিঙ্গাসহ কোনো প্রকার অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিউ মোয়ে বাংলাদেশ সরকার ও বিজিবির প্রতি কতৃজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়াটির মধ্য দিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক আরও উন্নত হয়েছে।

Tanim Cargo
Tanim Cargo