আবু বক্কর সিদ্দিক, লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা ইউনিয়নের শিয়ালখোওয়া গ্রামে বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়মিত হাট বসানো নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর প্রতিবাদ এবং প্রশাসনের একাধিক নির্দেশনা উপেক্ষা করে জোরপূর্বক এই হাট বসানো হচ্ছে। ফলে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলাধুলা ও পড়াশোনার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
শিক্ষার্থীরা জানায়, গেল বছর আন্দোলনের মাধ্যমে তারা মাঠটিকে হাটমুক্ত করেছিল। তখন বিদ্যালয় দুটিতে শিক্ষার ও খেলাধুলার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরেছিল। কিন্তু চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল থেকে হাটের ইজারাদার আবারো একই মাঠে হাট বসানো শুরু করেন। এতে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এবং শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
প্রশাসন একাধিকবার মৌখিক ও লিখিত নির্দেশনা দিলেও হাট সরেনি। গত ২৫ এপ্রিল কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা স্কুল কর্তৃপক্ষ ও হাটের ইজারাদারকে চিঠি পাঠান। কিন্তু তাতেও কোনো ফল হয়নি। পরবর্তীতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে গত ২৯ জুলাই লালমনিরহাট জেলা প্রশাসককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরও ইজারাদার সেই নির্দেশনা অমান্য করে মাঠে হাট বসিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একই ক্যাম্পাসে অবস্থিত শিয়ালখোওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও শিয়ালখোওয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে যথাক্রমে ২২৩ ও ৬৫০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। প্রায় তিন একর আয়তনের এই মাঠে আশপাশের আরও তিনটি কেজি স্কুল ও একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও খেলাধুলা করে। কিন্তু হাট বসার কারণে এখন তারা মাঠে প্রবেশ করতে পারছেন না। অভিযোগ উঠেছে, হাট বসিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ অবৈধভাবে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন, যার কারণে তারা হাটমুক্ত স্কুলমাঠের দাবিতে নীরব ভূমিকা পালন করছেন।
শিয়ালখোওয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন,
হাট বসার দিন মাঠে বিপুল মানুষের সমাগম হয়। শব্দদূষণের কারণে ক্লাসে মনোযোগ দেওয়া যায় না। খেলাধুলা করতে না পারায় মানসিক চাপও বেড়ে যাচ্ছে।
অভিভাবক সুলতান হোসেন বলেন,
এভাবে চলতে থাকলে আমাদের সন্তানদের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে বাধ্য হতে হবে।
হাটের ইজারাদার আসাদুল হক হিরু এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শিয়ালখোওয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি রেজাউল করিম মানিক বলেন,
“হাটের জন্য আলাদা জায়গা না থাকায় বহু বছর ধরে স্কুলমাঠেই হাট বসছে। স্থানীয় ৯৫ শতাংশ মানুষ এই হাটের পক্ষে। এলাকার অর্থনীতির সঙ্গে হাটটি সম্পৃক্ত।
প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান জানান,
হাট বসানোর বিনিময়ে প্রতিষ্ঠান কিছু অনুদান পায়, যা দিয়ে উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়। তবে প্রশাসন যদি বিকল্প জায়গা নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে সেটিই সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে।
কালীগঞ্জ ইউএনও জাকিয়া সুলতানা বলেন,
স্কুলমাঠে হাট না বসাতে আগেই চিঠি দিয়েছি। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে পুনরায় ব্যবস্থানেওয়াহচ্ছে। আগামী এক মাসের মধ্যে হাট সরানোর জন্য এসি ল্যান্ড কাজ শুরু করেছেন।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন,“বিভাগীয় কমিশনারের চিঠির পর ইউএনওকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি। খুব শিগগিরই স্কুলমাঠ হাটমুক্ত করা হবে।









