ঢাকাসোমবার , ১ এপ্রিল ২০২৪
  • অন্যান্য
আজকের সর্বশেষ সবখবর

সিলেটে শিলাবৃষ্টির তান্ডবে বাড়ি ঘরের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি

আজকের বিনোদন
এপ্রিল ১, ২০২৪ ৩:৩১ অপরাহ্ণ । ৪১ জন
Link Copied!
দৈনিক আজকের বিনোদন সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মো. মতিউর রহমান, সিলেট থেকেঃ সিলেটে গত রোববার ৩১ মার্চ রাত ১০ টা ২৫ মিনিটে হঠাৎ করেই শুরু হওয়া শিলাবৃষ্টিতে টিনের তৈরি ঘর বাড়ির ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি শুরু হওয়ার সাথে সাথে শিলাবৃষ্টিও শুরু হয়, শিলাবৃষ্টির তান্ডব চলে প্রায় ১২ মিনিট পর্যন্ত। সিলেটে জেলার ১৩ টি উপজেলার সবকয়টি উপজেলায় আঘাত আনে কালবৈশাখী ঝড়। ঝড়ের সাথে শুরু হয় প্রচন্ড শিলাবৃষ্টি। শিলাবৃষ্টি ও তীব্র ঝড়ের কবলে হাজার হাজার ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সিলেট জেলার সিলেট সদর উপজেলা, গোলাপগঞ্জ উপজেলা ও জকিগঞ্জ উপজেলা। মাত্র ১২ মিনিট চলা শিলাবৃষ্টির তান্ডবে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সিলেট সদর উপজেলায় প্রায় ৬০/৭০ ভাগ ডেউ টিনের চালের তৈরি বাড়ি ঘরের ব্যপক ক্ষতিক্ষতি হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের সবকয়টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৩নং খাদিমনগর ইউনিয়ন ও ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়ন দু’টি ভৌগোলিক অবস্থা পাশাপাশি হওয়ায় ক্ষতির পরিমান সবচেয়ে বেশি। বাকী ইউনিয়ন গুলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এই দু’টি ইউনিয়নের চাইতে কিছুটা কম।
শিলা বৃষ্টিতে সিলেট নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলায় ভোগান্তির শিকার হয়েছেন সাধারণ মানুষ। বড় বড় শিলায় নগরীর বিভিন্ন জায়গায় মাইক্রোবাস (কার), সিএনজি (অটোরিকশা) এর গ্লাস ফেঁটে যায়। বিভিন্ন বাসার জানালার কাঁচের গ্লাস, টিনের চাল শিলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিলাবৃষ্টির আঘাতে বেশ কয়েকজন লোক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়াও গোলাপগঞ্জের ঢাকাদক্ষিণে শিলার আঘাতে দুই ব্যক্তির মাথা ফেঁটে যায়। এদিকে সিলেট নগরীতে হঠাৎ শিলা বৃষ্টিতে ভোগান্তিতে পড়েন ঈদের শপিংয়ে আসা ক্রেতারা। হঠাৎ করেই শিলা বৃষ্টি শুরু হলে দিক বেদিক ছুটোছুটি করে বিভিন্ন মার্কেটে আশ্রয় নেন তারা।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের খোঁজ নিতে রাতে
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ক্ষয়ক্ষতির ভয়াবহ চিত্র। স্মরণকালের ভয়াবহ শিলাবৃষ্টির আঘাতে ঘর বাড়ির চালের টিন ঝাঁঝরা হয়ে গেছে। একটু পর পর বৃষ্টি হচ্ছে, সেই বৃষ্টির পানি ঘরের ভিতর বাহিরের মত সমান ভাবে পড়ছে। ঘরের ভিতরে দাঁড়ানোর মত কোনো শুকনো জায়গা না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা বৃষ্টির পানিতে ভিজে ঘুমহীন রাত পার করেছেন। সবচেয়ে বেশি আতংকে ছোট ছোট শিশুরা, শিলাবৃষ্টির সময় বড় বড় শিলা টিনের উপর আঘাত আনে, সেই সময় টিনের উপর আঘাতে প্রচন্ড বিকট শব্দের সৃষ্টি হয়, সেই শব্দের ভয়ে অনেক শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। নিরাপদ আশ্রয় না থাকায় শিশুরাও রাতে ঘুমাতে পারেনি। হঠাৎ করে এই বিপর্যয় তৈরি হওয়ায় মানুষের মানবেতর জীবনযাপন পার করতে হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলো, ক্ষয়ক্ষতি সইতে না পেরে অজরে চোখের পানি ফেলছেন। এ সময় মানুষের আহাজারিতে, আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। গরীব অসহায় পরিবারের দাবি সরকার যেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা করে।
সিলেটের পাইকারি ও খুচরা ডেউ টিনের দোকানে টিন কিনতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে টিনের দাম কিছুটা বেশি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। ডেউটিন ব্যবসায়ীরা ক্রেতার ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। সিলেটের পাইকারী বাজার লালদিঘির পারে গিয়ে সরোজিনীনে ঘুরে দেখা যায়, শত শত মানুষ ডেউটিন কিনতে দোকানে ভিড় করছেন। বিক্রেতারা ডেউটিন সিরিয়াল মত বিক্রয় করছেন। আবার কোনো সিরিয়াল ১/২ দিন পর আসবে বলে জানানো হয়। ক্রেতারা মেমো লিখে টাকা পরিশোধ করে সিরিয়াল নিয়ে চলে আসছেন, সময় আসলে ক্রেতারা ডেউটিন নিয়ে আসবেন। বর্তমানে ডেউটিনের বেশি পরিমানে চাহিদা থাকায় বিভিন্ন সাইজের ডেউটিন পাওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে।
এ দিকে শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে সিলেট সদর উপজেলা প্রশাসন। এরিমধ্য ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করতে ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা যাচাই-বাছাই করে তাদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে।
খাদিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দিলোয়ার হোসেন জানান, আমার ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শতকরা ১০০ টি টিনের ঘরের মধ্যে প্রায় ৮০টি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে মানুষের অবস্থা খুবই খারাপ। যা আমার ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। মানুষ বর্তমানে বৃষ্টির মধ্যে রাত পার করতেছেন, যা সত্যিই খুবই বেদনাদায়ক। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি (ইউএনও) স্যারকে জানিয়েছি। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করার জন্য বলেছেন। তালিকা তৈরি করে উপজেলা পরিষদে পাঠানো হবে। সরকারি কি পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হবে তা জানানো হয়নি। জানানো হলে পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। এই মানবেতর বিপর্যয়ের সময়  সরকারের পাশাপাশি বিত্তশালীদের এগিয়ে আসার আহবান জানান।
এ বিষয়ে সিলেট সদর উপজেলা নির্বার্হী অফিসার নাছরীন আক্তার জানান, আমার উপজেলাসহ সিলেটজুড়ে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এই শিলাবৃষ্টিতে আমার উপজেলায় টিনের তৈরি ঘর বাড়ির ব্যপক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার খবর পেয়েছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসক স্যারকে অবহিত করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কি পরিমাণ সহায়তা করা হবে তা ঊর্ধ্বতন স্যারদের সাথে কথা বলে ঠিক করা হবে। বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দিয়েছি। তালিকা হাতে পাওয়ার পর যাচাই-বাছাই করে সরকারি সহায়তা বিতরণ করা হবে বলে তিনি জানান।