ঢাকাশুক্রবার , ১৪ জুন ২০২৪
  • অন্যান্য

নরসিংদীতে পৈত্রিক সম্পত্তি দখলে বাঁধা, হত্যার হুমকি

আজকের বিনোদন
জুন ১৪, ২০২৪ ৬:০৯ পূর্বাহ্ণ । ৯২ জন
Link Copied!
দৈনিক আজকের বিনোদন সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

আশিকুর রহমান :-

নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামে ব্যক্তি মালিকানাধীন পৈত্রিক সম্পত্তি দখলে বাঁধা দেয়া এবং হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে। জমির প্রকৃত মালিককে নানাভাবে হয়রানি করার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী একেএম তৌহিদুজ্জামান বাদী হয়ে চাচা আওলাদ হোসেন (৫৫) এর বিরুদ্ধে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে নরসিংদীর আদালতে সিআর মামলা দায়ের করেন। যাহার মামলা নং- ৮৩২/২৩। তাং-৩/১২/২৩ ইং। মামলা সূত্রে জানা যায়, নিশ্চিন্তপুর গ্রামের মৃত সুরুজ আলী মাস্টারের ছেলে সামসুজ্জামান ও আওলাদ হোসেন। ১৩ বছর আগে মারা যান সামসুজ্জামান। তিনি মারা যাওয়ার পর ছেলে একেএম তৌহিদুজ্জামানের সাথে চাচা আওলাদ হোসেনের সাথে পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। পরে তৌহিদুজ্জামান বাদী হয়ে আদালতে চাচা আওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে জাল দলিল সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টাসহ চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। আদালত বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলার তদন্তভার গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওপর দেন। পরে গোয়েন্দা পুলিশ দীর্ঘ সময় তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিবাদী আওলাদ হোসেন সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে আদালত আওলাদ হোসেনে সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করলে পুলিশের হাতে ৩ জন গ্রেপ্তার হন। পরে তিনি গ্রেপ্তার এড়াতে কৌশলে বাদী তৌহিদুজ্জামানের সাথে মীমাংসার কথা বলে আদালত থেকে জামিন নেন। পরে তিনি তৌহিদুজ্জামানকে হত্যার হুমকিসহ নানাভাবে হয়রানি করছেন বলে জানা যায়।
ভুক্তভোগী তৌহিদুজ্জামান প্রতিনিধিকে জানান, আমার বাবা সামসুজ্জামান প্রায় ১৩ আগে মৃত্যুবরন করেন। বাবার মৃত্যুর আগে আমরা পরিবার নিয়ে শহরের পশ্চিম ভেলানগর এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছিলাম। তিনি পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর পৈত্রিক সম্পত্তি দখলের জন্য গ্রামের বাড়িতে যাই। সেখানে গিয়ে জানতে পারি আমার চাচা আওলাদ হোসেন কিছু সম্পত্তি জাল দলিল করে অন্যলোকের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন এবং বাকি সম্পত্তি টাকার বিনিময়ে বন্ধক রেখেছেন। এ বিষয়ে চাচার কাছে জানতে চাইলে তিনি আমার কাছে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন এবং মেরে ফেলার হুমকি দেন। পরে আমি বিষয়টি গ্রামের প্রতিবেশীসহ অন্যান্যদের জানালে তারা আমাকে আদালতে স্বরনাপূর্ণ হওয়ার জন্য বলেন। পরে আমি আদালতে তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ করি। আদালত আমার অভিযোগ আমলে নিয়ে ডিবিকে ঘটনার তদন্ত করার নির্দেশ দেন। ডিবি ঘটনার সত্যতা পেয়ে আওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। তিনি আরও জানান, আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিলে আমি বাধ্য হয়ে গত ২৬ মে মামলা তুলে আপোষ করি। আপোষনামায় এও উল্লেখ থাকে যে মামলা উঠানোর সম্পূর্ণ খরচ বহন করবেন বিবাদী আওলাদ হোসেন। বিবাদী মামলার খরচ বহন না করে উল্টো আমাকে অনবরত হুমকি দিলে আমি বাধ্য হয়ে মামলা উঠিয়ে ফেলি। মামলা উঠানোর পর বিবাদী আওলাদ হোসেন প্রতিটি জমিতে লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে খুঁটি দিয়ে জমি দখল করেন। এই ব্যাপারে গ্রামে সালিশ দরবার বসলে, তিনি পৈত্রিক দলিল আটকানোর কথা স্বীকার করেন এবং এও স্বীকার করেন আপোষ মীমাংসায় উল্লেখ করা ছিল তিনি আমাকে আমার পৈত্রিক সম্পত্তি বুঝিয়ে দিবেন এবং বিক্রিতে কোনো বাঁধা সৃষ্টি করবেন না। তিনি সকলের নিকট প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন ১৫ বছর ধরে যে জমিগুলো মোক্তারের স্ত্রী ও অন্যলোকদের নিকট বন্ধক দেওয়া তার ক্ষতিপূরণ তিনি দিয়ে দিবেন। স্থানীয় একাধিক গ্রামবাসী জানান, আওলাদ হোসেন ওইদিন সালিশি দরবারে প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে সে আগের রূপ। আওলাদ হোসেনের টাকা-পয়সা বৈধ নয়। সে প্রোপার্টির ব্যবসার আড়ালে অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসী দিয়ে চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি করে টাকা রোজগার করেন। অল্পসময়ে সে অবৈধ অঢেল টাকা মালিক বলে গেছেন। টাকার জোরেই সে এধরণের কার্যকলাপ করে যাচ্ছেন। ভয়ে অনেকেই তার বিরুদ্ধে কথা বলতে চান না।
পরে তৌহিদুজ্জামান সহ্য করতে না পেরে জাল দলিল করার দায়ে আওলাদ হোসেনের বিরুদ্ধে আদালতে আরেকটি সিআর মামলা দায়ের করেন। যাহার নং-১১৫/২৪। বর্তমানে মামলাটি সিআইডিতে তদন্তধীন রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ই জুন আনুমানিক রাত ৮টায় শহরের ব্রাহ্মন্দী এলাকায় মোটরসাইকেল যোগে দুই যুবক মাক্স পরা অবস্থায় অস্ত্র হাতে বিবাদীকে ভয় দেখিয়ে মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেন। নইলে মেরে লাশ গুম করে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেয়।
এদিকে বিবাদী আওলাদ হোসেনের একের পর এক হুমকি ও চাঁদার দাবিতে ভুক্তভোগী তৌহিদুজ্জামান ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। বর্তমানে তিনি ও তার পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। তিনি তার পৈত্রিক সম্পত্তি ফিরে পেতে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন।