ঢাকামঙ্গলবার , ১৩ মে ২০২৫
  • অন্যান্য
Tanim Cargo
আজকের সর্বশেষ সবখবর

মাটি কাটার তালিকায় নাম দিতে টাকা নেয়ার  অভিযোগ ইউপি সচিব ও সদস্যদের বিরুদ্ধে 

আজকের বিনোদন
মে ১৩, ২০২৫ ৮:৩১ অপরাহ্ণ । ১৪ জন
Link Copied!
দৈনিক আজকের বিনোদন সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য মাটিকাটা কাজের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউপি সচিব ও সদস্যদের বিরুদ্ধে। টাকা দিলে নাম থাকবে না দিলে আগের তালিকায় থাকলেও বাদ দেয়া হবে বলে টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
এই অন্যায়ের প্রতিবাদে এবং জড়িতদের বিচারের দাবীতে মানববন্ধন করেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের ভুক্তভোগীরা। সোমবার (১২ মে) বেলা ১২ টায় উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ গ্রহণ করেন।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া ৮ নং ওয়ার্ডের রবিউল ইসলামের স্ত্রী মোছা. সাথী (৩২)  বলেন, আমি মাটিকাটা কর্মসূচীর একজন সুবিধাভোগী। আমরা মাত্র ২ বছর কাজ করেছি। এখনও ৩ বছর বাকি আছে। অথচ ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে নতুন করে অনলাইন করার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।
সাথী আরও বলেন, জানতে চাইলে মহিলা মেম্বার মেরিনা বলেছেন আগের সব বাতিল করা হয়েছে এবং নতুন করে নাম দিতে হলে ৫ হাজার টাকা দিতে হবে। যারা টাকা দিতে পারছে তাদের মেম্বার ও সচিব মিলে অনলাইন করে দিচ্ছে। যারা টাকা দিচ্ছেনা তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে। আমাদের কেন বাদ দেয়া হচ্ছে এবং টাকা চাওয়া হচ্ছে। এর বিচার চাই।
ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের আফসার আলী (৫৭) বলেন, গত টার্মে ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী মেম্বার মেরিনা ও তার স্বামী ফজলার রহমান আমার স্ত্রী নুর বানুর নামে কার্ড করে নিজেরা টাকা তুলে খেয়েছে। তিন কিস্তিতে তারা প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
পরে একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে নিউজ করার পর বাধ্য হয়ে কার্ড ফেরত দিয়েছে। কিন্তু এখন তারা চ্যালেঞ্জ করে বলছে আমাদের কার্ড যে কোন মূল্যে বাতিল করে দিবে। তাদের এমন অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং বিচার দাবী করছি।
৫ নং ওয়ার্ডের হরি প্রসাদের স্ত্রী রেনু বালা (৪৮) বলেন, আগের তালিকা বাতিল করা হয়েছে তাই নতুন করে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। তাই পরিষদে গেলে সচিব বলেন, পুরাতন কাউকেই নেয়া হবেনা। তবে আমার হাতে ১৫-২০ টা কার্ড করে দেয়ার সুযোগ আছে। যদি ৫ হাজার টাকা দেন তাহলে আমি নিজেই অনলাইন করে দিবো। তা না হলে বাতিল হয়ে যাবে।
একই অভিযোগ করেন মৃত বছির উদ্দিনের ছেলে সোলাইমান (৫২)। তিনি বলেন, সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী হালনাগাদ করার নামে আমাদের মত গরীব অসহায় বেছে বেছে বাদ দেয়া হচ্ছে। মূলত: নতুন করে তালিকা করার নামে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য এমনটা করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে অনেককে বাদ দেয়ার ভয় দেখিয়ে অর্থ নিয়েছে মেম্বার আতিক ও ইউপি সচিব। আবার টাকা নিয়ে নতুন লোকজনকে তালিকায় নাম দেয়াও হয়েছে। টাকার বিনিময়ে এমন করার বিচার করতে হবে। নয়তো আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের মাটিকাটা দলের সর্দার নাজবুর রহমান নিভেল বলেন, হাল নাগাদ করা মানে মৃত, অন্যত্র চলে যাওয়া, তালিকায় নাম থাকলেও নিয়ম মাফিক কাজ না করা, দলীয় প্রভাবে, অর্থের বিনিময়ে বা চেয়ারম্যান মেম্বারের মাধ্যমে  অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সুযোগ পাওয়া কর্মীদের বাদ দিয়ে শূন্যস্থানে নতুন করে যোগ্য লোক নেয়া।
কিন্তু ঢালাওভাবে পুরো প্রকল্পের তালিকার সকলকে বাতিল ঘোষণা করে নতুনভাবে অনলাইনে আবেদন করতে বলে মাইকিং করা হয়েছে। মূলত: চেয়ারম্যান মেম্বাররা নতুন করে তালিকা করার অজুহাতে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্যই এই কাজ করেছেন এবং এমন অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। এবিষয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাচ্ছি।
৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সর্দার বিকাশ চন্দ্র রায়ও একই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, প্রকৃত হতদরিদ্রদের বাদ দিয়ে স্বচ্ছল ব্যক্তিদেরকেও টাকার বিনিময়ে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। আর গরীব অসহায় মানুষগুলোর পেটে লাথি মেরে চেয়ারম্যান মেম্বাররা নিজেদের পকেট ভড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা এমন অবৈধ কাজের প্রতিবাদ জানাই এবং তদন্ত পূর্বক শাস্তির আহবান জানাচ্ছি।
১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ার হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হওয়ায় নিজের এলাকার লোকজনকে বেশি সুবিধা দিয়ে তালিকায় নাম ঢুকিয়েছে। একইভাবে তাদের দিয়ে নিজ এলাকা ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডেই বেশি কাজ করেছেন। ১ নং থেকে ৫ নং ওয়ার্ডে ক্ষেত্রে বৈষম্য করেছে।
এখন পট পরিবর্তন হয়েছে, তাই আমরা বৈষম্যের অবসানে আমাদের এলাকাকে প্রাধান্য দিয়ে তালিকা করবো এবং কাজ করবো। এক্ষেত্রে কে কি ভাববে তা দেখার বিষয় না। একইভাবে মন্তব্য করেন, ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ওয়াদ আলী চৌধুরী ও ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আতিকুল ইসলাম। তারা টাকা নেয়ার ব্যাপারে কোন কথা বলবেম না বলে জানান।
সংরক্ষিত নারী মেম্বার মেরিনা ও তার স্বামী ফজলার রহমানও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং সংবাদকর্মীদের এড়িয়ে যান। পরে মোবাইলে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কল রিসিভ করেননি।
ইউপি সচিব রহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা পরিপত্র অনুযায়ী হালনাগাদের কাজ করছি। এখনও কাউকে বাদ দেয়ার কোন সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে নতুন পুরাতন সবাইকে নতুন করে অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছে। এরপর যাচাই বাছাই করে তালিকা প্রনয়ণ করা হবে। আর টাকা চাওয়া বা নেয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। মিথ্যে তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কেউ কোন প্রমাণ দিতে পারবেনা।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. লুৎফর রহমান বলেন, ইউএনও মহোদয়ের সাথে পরামর্শ করে মাটিকাটার তালিকা হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। ঢালাওভাবে কাউকে বাদ দেয়া হয়নি। তবে বিভিন্ন কারণে যেসব কর্মী বাদ যাবে সেই শুন্যস্থানে নতুনরা সুযোগ পাবে। তবে সেক্ষেত্রে অনিয়মের কোন সুযোগ কাউকেই দিবোনা। অর্থ নেয়ার অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে প্রমানিত হবে তাদের ব্যাপারে প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে।

Tanim Cargo
Tanim Cargo