আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মানুষকে এই পৃথিবীতে পাঠিয়ে কেবল একাকী ছেড়ে দেননি; বরং আকাশ ও পৃথিবীর সমস্ত কিছুই মানুষের উপকারে নিয়োজিত করেছেন।
মানুষ যেন এই নিয়ামতসমূহ চিনে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয় এবং তার বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করে। তবে আফসোসের বিষয় হলো, অনেক মানুষ এ সমস্ত নিয়ামতের প্রতি অন্ধ, তারা গাফিলতির সঙ্গে জীবন কাটায় এবং আল্লাহ্ সম্পর্কে এমন সব বিতর্কে লিপ্ত হয় যা তাদের অজ্ঞতা ও পথভ্রষ্টতার প্রমাণ।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বলেন,
اَلَمۡ تَرَوۡا اَنَّ اللّٰہَ سَخَّرَ لَکُمۡ مَّا فِی السَّمٰوٰتِ وَمَا فِی الۡاَرۡضِ وَاَسۡبَغَ عَلَیۡکُمۡ نِعَمَہٗ ظَاہِرَۃً وَّبَاطِنَۃً ؕ وَمِنَ النَّاسِ مَنۡ یُّجَادِلُ فِی اللّٰہِ بِغَیۡرِ عِلۡمٍ وَّلَا ہُدًی وَّلَا کِتٰبٍ مُّنِیۡرٍ তোমরা কি লক্ষ্য করনি? আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, আল্লাহ সেগুলো তোমাদের উপকারে নিয়োজিত করেছেন এবং তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নিয়ামতসমূহ পূর্ণমাত্রায় বর্ষণ করেছেন। কিন্তু মানুষের মধ্যে কেউ কেউ এমন রয়েছে, যারা আল্লাহ্ সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়, অথচ তাদের না আছে কোন জ্ঞান, না সঠিক পথের অনুসরণ, আর না কোন দীপ্তিমান কিতাব।
এই আয়াতে আল্লাহ্ আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে তিনি তার সৃষ্ট জগতের সবকিছুকে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত রেখেছেন—সূর্য, চন্দ্র, বৃষ্টি, বাতাস, প্রাণী, উদ্ভিদ—সবই মানুষের উপকারে। শুধু বাহ্যিক নয়, আল্লাহ মানুষকে অভ্যন্তরীণভাবে যেমন জ্ঞান, বিবেক, হৃদয়বোধ দিয়েছেন, তেমনি বাহ্যিকভাবে দিয়েছেন রিজিক, স্বাস্থ্য, পরিবার ইত্যাদি অগণিত নিয়ামত।
আল্লাহর এই অফুরন্ত নিয়ামতের পরেও মানুষ অকৃতজ্ঞ থেকে যায়। এমনকি কেউ কেউ আল্লাহ্ সম্পর্কে এমন সব বিতর্কে লিপ্ত হয়, যেগুলোর পেছনে নেই কোনো জ্ঞান, পথনির্দেশনা বা আসমানী কিতাব। তারা নিজেদের যুক্তিবাদী বা চিন্তাশীল দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে তারা জ্ঞানের অন্ধকারে রয়েছে।
নিয়ামতের স্বীকৃতি ও কৃতজ্ঞতা: রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন,
যে ব্যক্তি মানুষকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে না, সে আল্লাহকেও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে না। (তিরমিজি: ১৯৫৪)
এই হাদিসটি নির্দেশ করে যে মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতারই অংশ। কারণ সব নিয়ামতের মূল উৎস হলেন আল্লাহ।
নবীজি আরও বলেন, নিশ্চয়ই সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি সেই, যে বিতর্কপ্রিয়, কথা কাটাকাটিতে লিপ্ত হয়। (আবু দাউদ: ৪৮৫৭) যারা সত্য জ্ঞান ছাড়াই আল্লাহ্ সম্পর্কে বিতর্কে লিপ্ত হয়, তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়।
এই আয়াতটি আমাদের শিক্ষা দেয়—আল্লাহর নিয়ামত চিনে তা স্বীকার করা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং জ্ঞান ও হেদায়াতের পথে থাকার গুরুত্ব কতটা। শুধু বাহ্যিক বাস্তবতা দেখেই নয়, আমাদের হৃদয়ের গভীরেও আল্লাহর নিয়ামতের ছাপ রয়েছে। আর যারা এসব অস্বীকার করে, অজ্ঞতা ও বিতর্কে ডুবে থাকে—তারা নিজেরাই ক্ষতিগ্রস্ত। আমাদের উচিত আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা, তার দেওয়া হেদায়াতের আলো অনুসরণ করা এবং অজ্ঞতা ও অহঙ্কারমূলক বিতর্ক থেকে দূরে থাকা।
